এক সাদামাটা ন্যাপকিনে চুক্তিপত্র, এভাবেই যেনো শুরু হয়েছিল এক ফুটবল কিংবদন্তির গল্প। সময় গড়িয়েছে, গল্পে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য বাঁক, আবেগ, ব্যর্থতা ও বিজয়। আজ সেই রূপকথার ৩৮ বছর পূর্ণ হলো। আজ লিওনেল আন্দ্রেস মেসির জন্মদিন।
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন, আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে জন্মেছিলেন মেসি। কিংবদন্তি বিপ্লবী চে গুয়েভারার জন্মও সেই শহরে, এই জুন মাসেই। একই জায়গা, এক মাস, দুই ইতিহাস— যেন নিয়তিই বলে দিচ্ছিল, এই ছেলেটি বিপ্লব ঘটাবেই। তবে মেসির বিপ্লবের ময়দান ছিল সবুজ ঘাসে ঘেরা মাঠ, যেখানে পা রাখলেই ফুটে উঠেছে জাদুকরী স্পর্শ।
আরও পড়ুন: সিপিএলের আগে সাকিবের ম্যাক্স সিক্সটির চ্যালেঞ্জ

মেসির জীবনটা কখনোই কেবল পরিসংখ্যান ছিল না। ছিল না কেবল ব্যালন ডি’অর, গোলসংখ্যা কিংবা ট্রফির তালিকা। এটা ছিল এক অনন্য মানবিক অভিযাত্রাও—যেখানে ছোট্ট এক শিশুর দুর্বল শরীর থেকে গোটা বিশ্বকে বিমোহিত করার গল্প গাঁথা হয়েছে। বার্সেলোনার দেওয়া চিকিৎসা, ন্যাপকিনে লেখা চুক্তি, ১৭ বছরের ক্লাবপ্রেম, কোপা আমেরিকা আর সবশেষে বিশ্বকাপ জয়— সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এমনই এক কিংবদন্তি, যা ফুটবল বিশ্ব দেখতে পারেনি আর!
যে আর্জেন্টিনাতেই একটা সময় শুনতে হতো দুয়োধ্বনি, যে মেসিকে বলা হতো তার দেশপ্রেমও নেই। সেই জন্মভূমিকেই আগলে রেখে ৩৬ বছর পর এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের স্বাদ। ফুটবলটা মেসির জন্য সেদিনই পেয়েছিল পূর্ণতা।

স্বয়ং মেসি নিজেই বলেছেন, “ফুটবলের কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি সব পেয়েছি।” হ্যাঁ, তিনিই তো ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ৮টা ব্যালন ডি’অর থেকে বিশ্বকাপ— সব ছুঁয়ে দেখতে পেরেছেন। কিন্তু ভক্তদের চাওয়ার কি শেষ আছে? তারা এখনো চায় মেসি খেলুক অনন্তকাল। মাঠে নামুক, রোজকার ক্লান্ত জীবনে ছড়িয়ে দিক হালকা এক বিস্ময়।
আরও পড়ুন: সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে পোপ থামালেন নিজের বিরল রেকর্ড
এদিকে জন্মদিনেই মেসি আরও একবার নেমেছিলেন মাঠে। ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইন্টার মিয়ামির মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাস। প্রথম ৭৯ মিনিট পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। তায়েদো আলেন্দে ও লুইস সুয়ারেজের গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল মেসির দল। মনে হচ্ছিল, কিংবদন্তির জন্মদিনটা জয় দিয়েই রাঙাবে ইন্টার মিয়ামি।

কিন্তু ফুটবলের চিত্রনাট্যে যেনো লেখা ছিল অন্য গল্প। ৮০ ও ৮৭ মিনিটে দুটি গোল করে পালমেইরাস ম্যাচটিকে ফিরিয়ে আনে ড্রয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত পরের রাউন্ড নিশ্চিত হয় মেসিবাহিনীর। শেষ ষোলোতে ইন্টার মিয়ামি মুখোমুখি হবে মেসিরই সাবেক ক্লাব পিএসজির।
তবে আজকের এই দিনটি এসব ম্যাচ, পরিসংখ্যান আর জয়ের উর্ধ্বে। পিটার ড্রুরির ভাষায়, রোজারিওর সেই ছোট্ট ছেলেটি, যেন কথা বলছে তাঁর জার্সি গায়ে দেওয়া কোটি ভক্তদের হয়ে। মেসি এখন কোটি মানুষের, মেসি ছুঁয়ে ফেলেছে আকাশটাও।’

বিরল এক রোগে যার থেমে যাওয়ার কথা ছিল সেই ছোট্টবেলাতেই। সেই লিওনেল মেসিই আজ থামিয়ে দিয়েছেন ফুটবলকেই। এভাবে ক্যারিয়ারের পূর্ণতা এনেছেই বা ক’জন!
আরও পড়ুন: রোনালদোর সঙ্গে দ্বৈরথ ফুটবলের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়: মেসি
শুভ জন্মদিন লিওনেল মেসি, ৩৮ এও চলুক আপনার বাঁ পায়ের জাদু!