গল টেস্টে কত কিছুই না হলো! দুই ইনিংসেই শান্তর রেকর্ড সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য ১৬৩ কিংবা ম্যাথিউসের বিদায়। কিন্তু, দিনশেষে ফলাফল হলো শূন্যই। ১২ বছর পর গলে কোনো টেস্ট ড্র হলো, মজার ব্যাপার হচ্ছে শেষবারও যে দুই দলের ম্যাচ ড্র হয়েছিল, তারাও ছিল এই বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
সাম্প্রতিক সময়ে বাইশগজে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন নিয়েই তাই মাঠে নেমেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা যদিও ভালো হয়নি টাইগারদের। মাত্র ৫ রানেই এনামুল হক বিজয়ের উইকেট হারানো বাংলাদেশ, দলীয় ৫০ রানের আগেই হারায় আরও ২ উইকেট। তবে গল্পের শুরুটা যেনো এরপর থেকেই।

আরও পড়ুন: ওয়ানডেতে বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক মিরাজ
প্রথম ইনিংসের চতুর্থ উইকেটে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ২৬৪ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক শান্ত। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনি। সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিকও। তাও কিনা ১৩ ইনিংস পর প্রথমবারের পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেই তা নিয়ে যান শতকের ঘরে। টেস্টে এটি মুশফিকের ১২ তম সেঞ্চুরি। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র মুমিনুলেরই তার চেয়ে বেশ ১৩টি টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে।
তবে দলীয় ৩০৯ রানে ব্যক্তিগত ১৪৮ রানে শান্ত বিদায় নিলেও লিটন দাসকে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখেন মুশফিকুর রহিম। এই দুই ব্যাটারের দৃঢ়তায় টেস্ট ক্রিকেটে ৩০তম বারের মতো এক ইনিংসে ৪০০ রানের বেশি রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।

এরপর ঘন্টাখানেক বৃষ্টিও হয় গলে। যার পরেই ঘটে ছন্দপতন। ৩৫০ বলে ৯ চারে ১৬৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে আউট হোন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। এরপর দ্রুত ফিরে যান লিটন দাসও। টেস্ট ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো নব্বইয়ের ঘরে আউট হোন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪৯৫ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আসিথা ফার্নান্দো একাই নেন ৪টি উইকেট। এছাড়া থারিন্দু ও রত্নায়েকে নেন ৩টি করে উইকেট।
আরও পড়ুন: সমীকরণের মারপ্যাঁচে টিকে আছে এশিয়ান কাপের স্বপ্ন
জবাবে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। এরপর তাইজুলের বলে এই জুটি ভাঙে। যদিও দ্বিতীয় উইকেটে পাথুম নিশাঙ্কার সঙ্গে দীনেশ চান্দিমালের ১৫৭ রানের জুটিতে আবারও ম্যাচে ফিরে শ্রীলঙ্কা। এরই মাঝে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান পাথুম। অন্যদিকে, ৫৪ রান করে আউট হয়ে যান চান্দিমাল।
শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ১৮৭ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন পাথুম নিশাঙ্কা। এছাড়া ম্যাথিউসের ৩৯ ও কামিন্দু মেন্ডিসের ৮৭ রানের বদৌলতে ৪০০ রানের মাইলফলক পেরোয় লঙ্কানরাও। যদিও শেষ পর্যন্ত টাইগারদের থেকে ১০ রানে পিছিয়ে থেকেই ৪৮৫ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫টি উইকেট নেন স্পিনার নাঈম হাসান। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে এই নিয়ে চারবার ফাইফার পেলেন তিনি। তবে বিদেশের মাটিতে এবারই প্রথম। এছাড়া ৩ উইকেট শিকার করেন পেসার হাসান মাহমুদ।

আরও পড়ুন: পেসারদের দাপটে ফাইনালের প্রথম দিনেই ১৪ উইকেটের পতন
১০ রানের লিডে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ এবারও শুরুতেই হারায় এনামুল হক বিজয়কে। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত ০ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন মাত্র ৪ রান। এরপর মুমিনুলকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজে লেগে পড়েন সাদমান ইসলাম। তবে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ফিরে যান মুমিনুলও।
আর প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও আবার দলের হাল ধরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সাদমানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ ফিফটি তুলে নেওয়া সাদমান ব্যক্তিগত ৭৬ রানে আউট হয়ে যান।
আর প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও গলে লঙ্কান বোলারদের ব্যাট হাতে বড় পরীক্ষার মুখে ফেলে দেন মুশফিক ও শান্ত। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটার। রান আউট হওয়ার আগে মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে ৪৯ রান। শেষ পর্যন্ত নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ইনিংসের কল্যানে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন: সানদিদ-জিসানদের নিয়ে এইচপির দল ঘোষণা
যেখানে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের ১৬তম অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তিনি। আর ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দুইবার টেস্টের এক ম্যাচেই জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকালেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শেষ দিনে ১২৫ রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন তিনি। শ্রীলঙ্কার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭ ওভারে ২৯৬ রান।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩২ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলা লঙ্কানরা, ৪৮ রানের ভেতরেই হারায় আরও ৩ উইকেট। যদিও শেষ পর্যন্ত দলীয় ৭২ রানেই থামে লঙ্কানদের ইনিংস। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ৮ রান করে তাইজুলের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাথিউস। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এই ম্যাচে গার্ড অব অনার দিয়েই সম্মানিত করেন এই ক্রিকেটারকে।

শেষ দিনে ঘন্টাখানেকের বৃষ্টি, শান্তর সেঞ্চুরি সব ছাপিয়ে ম্যাচে ফলাফল হয় ড্র। এই নিয়ে গলে ৪৫ টেস্টের ৭ ম্যাচে ড্রয়ের দেখা মিললো। আর ম্যাথিউসের বিদায়ী টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকানো বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হোন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরু ট্রাজেডি: যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিসিসিআই