বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

‘পরের শিশুটি আমাদেরও হতে পারে’- গা জা প্রসঙ্গে গার্দিওলা

প্রায় ২১ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গা জায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বর্বরোচিত এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি। যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। ফিলিস্তিনিদের উপর এমন অমানবিক নির্যাতনে কাঁদছে পুরো বিশ্ব। স্প্যানিশ কোচ পেপ গার্দিওলাও তাদেরই একজন। ম্যানসিটির এই কোচ বলেন, গা জার নিদারুণ পরিস্থিতি দেখে দেখে তিনি যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেছেন, ভয়ও পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: এনগিডিকে নিয়েই ফাইনালে নামছে প্রোটিয়ারা

ম্যানচেস্টার সিটির সফল এই কোচ সম্প্রতি ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ডিগ্রি নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে উঠে নিজের পুরস্কার নিয়ে যতটা না বললেন, তার চেয়ে অনেক বেশি বললেন গা জা, যুদ্ধ আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। তাঁর বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। স্পষ্ট ভাষায়, আবেগ মিশিয়ে, গার্দিওলা জানিয়েছেন, গা জার শিশুদের মৃত্যু তাঁকে প্রতিদিন ভীত করে তোলে।

ভিডিওতে গার্দিওলা বলেন, “গা জায় যা দেখছি, সেটি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যন্ত্রণায় আমার শরীর কুঁকড়ে যায়। আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই, এটা আদর্শের কোনো ব্যাপার নয়। আমি ঠিক, আপনি ঠিক, ব্যাপারটা তেমন কিছুও নয়। এটা পুরোপুরিই জীবনকে ভালোবাসার, প্রতিবেশীর ভালোমন্দ দেখার বিষয়।” কথাগুলো বলার সময়ও স্পষ্ট ছিল তাঁর আবেগ। 

আরও পড়ুন: ওপেনিংয়ে লাবুশেন, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী একাদশ

যুদ্ধের ভয়াবহতা কেবল পরিসংখ্যান নয়, তা যে একজন বাবার হৃদয়েও ছুঁয়ে যায়, সেটা বোঝাতে গিয়ে গার্দিওলা বলেন, “বোমার আঘাতে চার বছরের ছেলেমেয়েরা মারা যাচ্ছে, তারা মারা যাচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতাল কোথায়, সেগুলো তো ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা হয়তো মনে করতে পারি, এটা আমাদের বিষয় নয়। তবে সাবধান। পরের জন কিন্তু আমাদের কেউ হতে পারে। এরপর যে চার বছরের বাচ্চাটা প্রাণ হারাবে, সে কিন্তু আমাদেরই কেউ হতে পারে। ক্ষমা চাচ্ছি, কিন্তু আমার ছেলেমেয়ে মারিয়া, মারিয়ুস ও ভালেন্তিনার ছবি ভেসে উঠছে। গা জায় শিশুদের দুঃস্বপ্ন ঘিরে ধরার পর থেকে প্রতিদিন সকালে এসব খবর দেখে খুব ভয় লাগে।”

গার্দিওলা গা জার প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন এবারই প্রথম। তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তাঁর অবস্থান বরাবরই স্পষ্ট। কাতালান স্বাধীনতার পক্ষে তিনি বহুবার কথা বলেছেন, ২০১৭ সালে সেই দাবিতে বার্সেলোনায় মিছিলেও অংশ নেন। এমনকি ২০১৮ সালে কারাবন্দী কাতালান নেতাদের সমর্থনে মাঠে হলুদ ফিতা পরে নামায় ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানাও গুণতে হয় তাঁকে। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় গার্দিওলাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে দুটি বড় কারণেই। প্রথমত, তিনি ম্যানচেস্টার সিটিকে এনে দিয়েছেন ১৮টি ট্রফি। দ্বিতীয়ত, তাঁর পারিবারিক উদ্যোগ, ‘গার্দিওলা সালা ফাউন্ডেশন’, যা কাজ করে অসহায় ও দরিদ্র মানুষদের নিয়ে।

আরও পড়ুন: ভক্তদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হামজার বার্তা, ‘আবার ফিরবো, ইনশাআল্লাহ’

শুধু গা জা নয়, বক্তৃতায় সুদান ও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন গার্দিওলা। তাঁর মতে, বিশ্বে যা কিছু ঘটে, তা থেকে নির্লিপ্ত থাকা উচিত নয়। এই বার্তা দিতে গিয়ে একটি গল্প টানেন তিনি, “হয়তো মনে হতে পারে আমরা যেখানে বাস করি, সেখান থেকে অনেক দূরের ঘটনা। আপনি হয়তো চিন্তা করেন, আমাদের কী করার আছে। আমার একটি গল্প মনে পড়ছে। এক জঙ্গলে আগুন লাগল। সেখানে থাকা অসহায় সব প্রাণী ভয়ে কুঁকড়ে গেল। তবে ছোট একটি পাখি পাশের সাগর থেকে বারবার ঠোঁটে করে পানি নিয়ে এসে ঢালতে লাগল। তা দেখে এক সাপ হেসে বলে উঠল, “ভাই, করছো টা কী? তুমি তো আগুন নেভাতে পারবে না।” পাখিটি উত্তরে বলল, “আমি জানি।” সাপটি আবার বলল, “তাহলে কেন বারবার এই কাজ করে যাচ্ছ?” “আমি শুধু নিজের কাজটা করছি,” এই বলে পাখিটি চলে গেল।”

গল্পের শেষে গার্দিওলা বলেন, “এই পৃথিবী আপনাকে মনে করিয়ে দেবে, পার্থক্য গড়ার জন্য খুবই ক্ষুদ্র আপনি। তবে গল্পটা বলছে, একজনের শক্তি শুধু নিক্তিতে মাপার জিনিস নয়। এটা বিকল্প ভাবার বিষয়, সামনে এগিয়ে আসার বিষয়, চুপ করে থাকতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়।”

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর