বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার গা বাঁচানো ড্র

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ব্রাজিলের জন্য মহা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল প্যারাগুয়ের বিপক্ষের ম্যাচ। সেই ম্যাচে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের এক গোলে ব্রাজিল নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপের টিকিট। অন্য ম্যাচে কোপা আমেরিকার শেষ আসরের দুই ফাইনালিস্ট আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া ছাড় দেয়নি কাউকে। ফলাফল ১-১ গোলে ড্র। 

আরও পড়ুন: ওপেনিংয়ে লাবুশেন, ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী একাদশ

এই জয়ের মাধ্যমে ব্রাজিল ১৬ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট অর্জন করে উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে। সমান পয়েন্টে প্যারাগুয়ে রয়েছে পঞ্চম স্থানে, তবে গোল ব্যবধানে তারা পিছিয়ে আছে। তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে আর্জেন্টিনা, যাদের সংগ্রহ ৩৫ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইকুয়েডর, তাদের পয়েন্ট ২৫ হলেও গোল ব্যবধান উন্নত হওয়ায় তারা ব্রাজিলের উপরে রয়েছে।

এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব একেবারেই ভালো যাচ্ছিল না ব্রাজিলের জন্য। প্যারাগুয়ে ম্যাচের আগে শেষ ৫ ম্যাচে ছিল মোটে ১ জয়। কার্লো আনচেলত্তি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম ম্যাচেও ছিল না ব্রাজিলের দাপুটে পারফরম্যান্স। তবে বুধবার ভোরের ম্যাচে ব্রাজিলকে অনেকটাই দেখা গেছে আগ্রাসী ভূমিকায়। ম্যাচে ৭৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ব্রাজিল শট নেয় ১১টি, যার ৪টি ছিল লক্ষ্যে। ব্রাজিলের আজকের খেলায় আনচেলত্তির কৌশলের ছাপও ফুটে উঠেছে দারুণভাবে।

আরও পড়ুন: টেন্ডুলকারের পাশে নিজের নাম, বিশ্বাস হচ্ছে না অ্যান্ডারসনের

ইকুয়েডরের বিপক্ষে  ব্রাজিলের আক্রমণভাগের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরো ম্যাচে মাত্র ৩টি শট নিতে পেরেছিল আনচেলত্তির দল। ম্যাচের পর আক্রমণে গতি আনার কথা বলেছিলেন ব্রাজিল কোচ নিজেও। সেই লক্ষ্যে একাদশে উল্লেখযোগ্য তিনটি পরিবর্তনের কথাও শোনা গিয়েছিল। কথা মতো, গেরসন, এস্তেভাও ও রিচার্লিসনের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, রাফিনিয়া ও মাতেউস কুনিয়া। এই সিদ্ধান্তের ছাপ পাওয়া গিয়েছে খেলাতেও।

ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমন চলতে থাকলেও ৪৪ মিনিটে ব্রাজিল দেখা পায় তার কাঙ্খিত গোলের। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র রিয়াল মাদ্রিদে নিজের পারফরম্যান্সে বদৌলতে বিশ্বমানের তারকায় পরিণত হয়েছেন। তবে জাতীয় দলে অনেকটা নিষ্প্রভ সময় কাটিয়েছেন তিনি। রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে আনতেই দর্শকরা যেন নতুন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে দেখলো প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। 

আরও পড়ুন: ২৯ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় নিকোলাস পুরানের

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র গোল করলেও স্কোর লাইনকে আর এগিয়ে নিতে পারেননি ব্রাজিলের কেউ। সেই এক গোলেই জয়ী হয় ব্রাজিল। বিরতির পর প্যারাগুয়ে খেলায় সমতা আনার চেষ্টা করলেও ব্রাজিলের দুর্দান্ত রক্ষণভাগ সামলে নিয়েছে। সব কিছু সামলে ম্যাচের ৫৯ মিনিটে ব্রাজিল ব্যবধান দ্বিগুন করতে কাজ করছিল। তবে সময়-সুযোগ করে উঠতে পারেনি কেউই।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ১৬ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা আর্জেন্টিনা অনেকটা হতাশই করেছে ভক্ত-সমর্থকদের। দশজনের দল নিয়ে আর্জেন্টিনার এমন ড্র-কে মান বাঁচানোই বলতে হয়। ম্যাচের ২৪ মিনিটে লুইস দিয়াজের একক নৈপুণ্যের গোলে পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। সেখান থেকে ম্যাচে ফিরতে সময় লেগেছে ৮০ মিনিট পর্যন্ত। 

আরও পড়ুন: হামজা-শমিতদের লড়াই, তবুও হারল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সময় বুধবার (১১ জুন) ভোর ৬ টায় শুরু হয় ম্যাচটি। কোপা আমেরিকার শেষ আসরের দুই ফাইনালিস্ট, আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়ার এই লড়াই ঘিরে উত্তেজনার অভাব ছিল না। ম্যাচের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো ম্যাচটি সহজ হবে না কারো জন্যই। চতুর্থ মিনিটেই হুলিয়ান আলভারেসের সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে দুর্দান্ত এক সুযোগ তৈরি করেন মেসি। কিন্তু তাঁর বাঁকানো শট সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। কলম্বিয়াও থেমে থাকেনি। মাত্র দুই মিনিট পরই হুয়ান লুকুমির হেড অল্পের জন্য বাইরে যায়। 

১৬ মিনিটে হামেস রদ্রিগেসের পাস থেকে দাভিয়ের মাচাডো গোলের সামনে গিয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। এরপর ২২ মিনিটে আলভারেজের জোরালো শট ঠেকান কলম্বিয়ার গোলরক্ষক কেভিন মিয়ের। অবশেষে ২৪ মিনিটে গোলের দেখা পায় কলম্বিয়া। দারুণ এক গোলে দলকে এগিয়ে দেন লুইস দিয়াস। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে তিনজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জোরালো শটে বল পাঠান জালে। 

আরও পড়ুন: ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলবে বাংলাদেশ, প্রত্যাশা ক্রীড়া উপদেষ্টার

২৮তম মিনিটে থিয়াগো আলমাদা দুর্দান্ত এক স্লাইডে রদ্রিগেসকে থামিয়ে আরেকটি সম্ভাব্য গোল ঠেকান। ৩০ মিনিটে একবার জালে বল পাঠালেও অফসাইডে থাকায় গোল পায়নি আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মেসির ফ্রি কিকেও কেউ পা ছোঁয়াতে পারেননি। এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় স্বাগতিক দল।

দ্বিতীয়ার্ধে বল দখলে রাখলেও গোল পাচ্ছিল না আর্জেন্টিনা। বরং পাল্টা আক্রমণে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে কলম্বিয়া। ৬০ মিনিটে রিচার্ড রিওসের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান মার্তিনেজ। ফিরতি বলে আন্দ্রেস রামোনের শটও ফিরিয়ে দেন তিনি। ৬৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার ভালো একটা সুযোগ নষ্ট হয়। গঞ্জালেসের শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক, ফিরতি বলে ফার্নান্দেজ কাছ থেকে মিস করেন।

আরও পড়ুন: এশিয়ান কাপ স্বপ্ন ছোঁয়ার লড়াইয়ে বাংলাদেশের সমীকরণ

৬৮ মিনিটে মেসির ফ্রি কিক সঠিকভাবে ঠেকাতে পারেননি কেভিন মিয়ের। আলগা বল পেয়ে গনসালেসের শট লাগে পোস্টে। ঠিক এক মিনিট পর ঘটে বড় ঘটনা। কেভিন কাস্তানো হেড করতে গেলে পা তুলে শট করেন এনজো ফার্নান্দেজ। তার বুট লাগে কাস্তানোর মাথায়। রেফারি লাল কার্ড দেখান ফার্নান্দেজকে। ফার্নান্দেজের লাল কার্ড দেখার কিছু সময় পর মেসিকেও মাঠ থেকে উঠিয়ে নেন কোচ স্কালোনি।

দল তখন ১০ জনের, মেসিহীন, এক গোলে পিছিয়ে, সব মিলিয়ে একরকম বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এই অন্ধকারেই আলোর মশাল হাতে হাজির হন থিয়াগো আলমাদা। ৮০তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে বল পেয়ে একাই ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষ রক্ষণে। বাম পায়ের এক দুর্দান্ত শটে বল পাঠিয়ে দেন জালে। সমতায় ফেরে আলবিসেলেস্তেরা। 

আরও পড়ুন: প্রথমার্ধের শেষমুহুর্তের গোলে পিছিয়ে বাংলাদেশ

৮৬তম মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া। লুইস দিয়াসের ক্রসে হেড করেছিলেন রিওস, কিন্তু খুব কাছ থেকে বল বাইরে মারেন তিনি। শেষের কয়েক মিনিটে আর তেমন কোনো বড় সুযোগ তৈরি হয়নি। ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়। এই ড্রয়ের ফলে ১৬ ম্যাচে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই রইল আর্জেন্টিনা। কলম্বিয়ার পয়েন্ট ২২, তারা আছে ছয়ে।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর